জেনে নিন লেবুর উপকারিতা এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া !!

0
16720
জেনে নিন লেবুর উপকারিতা

লেবু, সকলেই কম বেশি খেয়ে থাকি। খিচুরি অথবা যেকোনো খাবারের সাথে এটি অনেকের অনেক প্রিয়। আবার আচার তৈরি করেও অনেকে খেয়ে থাকে। ছোট একটা ফল কিন্তু এর উপকারিতা প্রচুর আর পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এতে রয়েছে ৬ ভাগ সাইট্রিক অ্যাসিড, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৫, বি৩, বি১, বি২, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, কার্বোহাইড্রেট ফ্যাট এবং প্রোটিন। লেবুর একটা প্রধান উপকারিতা হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির তৈরি করা রোগ বালাই দূরীকরণ এবং শরীরের সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। আর অন্যটা হচ্ছে হজম শক্তি বাড়ানো এবং যকৃৎ পরিষ্কারের মাধ্যমে ওজন কমানোর ক্ষমতা। সকালে খালি পেটে এক কাপ পাকা লেবুর রস মেশানো উষ্ণ জল খান, আর তারপর দেখুন না কি হয়। আর যদি যোগ হয় মধু, তাহলেতো জাদু। লেবুর কত গালভরা নাম কাগজি লেবু, পাতি লেবু, কমলা লেবু, মোসাম্বি লেবু, গন্ধরাজ, বাতাবি লেবু ও গোড়ালেবু।

লেবুর উপকারিতা

লেবুর উপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:-

  • লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি ঠাণ্ডা কাশি প্রতিরোধে খুবই উপকারী।
  • লেবুতে থাকে ইলেকট্রোলাইটস ( যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি)। লেবু-জল আপনাকে হাইড্রেট করে, শরীরে যোগান দেয় এইসব প্রয়োজনীয় উপাদানের।
  • অন্য যে কোনো খাবারের থেকে লেবু-জল ব্যবহারে লিভার অনেক বেশী পরিমানে, দেহের প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে পারে।
  • লেবুতে বিদ্যমান ফ্ল্যাবোনয়েড যা শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধ করে, এটি শরীরকে ফিট রাখে। শরীরের পিএইচ লেভেল উন্নত করে। পিএইচ লেভেল যত উন্নত, শরীর রোগের সাথে লড়াই করতে তত সক্ষম।
  • লেবুর রস ও গরম পানি একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে অন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ফেলে।
  • এটি রুটিন অনুযায়ী খেলে চোখের অসুখ দূর হয়।
  • হাড় জয়েন্ট ও ম্যাসল এর ব্যথা দ্রুত কমায়।
  • লেবুতে আছে ক্যান্সার বিরোধী ২২ প্রকার যৌগ। যা ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • বুক-জ্বালা দূর করে।
  • লেবু অন্ত্রের কৃমি ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
  • যাঁরা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন দীর্ঘদিন, তাঁরা লেবু খাবেন নিয়ম করে। উষ্ণ কিংবা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে সকালে খাবারের আধা ঘণ্টা আগে খেয়ে নিন, উপকৃত হবেন।
  • মুখের রুচি বাড়াতে লেবুর জুড়ি নেই।
  • লেবুতে থাকে সাইট্রিক এসিড। যা, আপনার হজম-তন্ত্রকে উন্নত রাখে। এটা মেটাবলিজম বা হজমশক্তি বাড়ায়। ভূরিভোজের পর লেবু খেয়ে নিন। খাবারগুলো সহজে হজম হয়ে যাবে এবং পেট ফাঁপায় ওষুধের মতো কাজ করবে।
  • ওজন দ্রুত কমাতে সহায়তা করে। লেবুতে থাকে পেকটিন-ফাইবার যা খিদে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • পেট পরিষ্কার ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে সহায়তা করে।
  • এটি শরীরের রক্তবাহী ধমনী ও শিরাগুলিকে পরিষ্কার এ শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখে।
  • লেবু ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • লেবু-জল টক্সিক উপাদান দূর করে লিভারকে পরিষ্কার রাখে।
  • স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁত ব্যথা কমায়।
  • ৪/১ লেবুর রস, কিছু লবণ এবং লেবুর রসের অর্ধেক পরিমাণ বেকিং সোডা নিয়ে দাঁতে ঘষুন। এটি আপনার দাঁত আরও সাদা করবে।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করে দীর্ঘক্ষণ সজীব রাখে।
  • শরীরের রিঙ্কেল কমাতে সাহায্য করে।
  • আপনার নার্ভাস-সিস্টেমে দারুণ কাজ করে। লেবু-জলের পটাশিয়াম আপনার বিষণ্ণতা ও উৎকণ্ঠা দূর করতে সহায়ক।
  • কিডনী ও পাকস্থলীর পাথর দূর করতে অসাধারণ কার্যকর।
  • লেবু ইউরিক অ্যাসিড সমস্যা দূর করতে সহায়ক।
  • গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই ভালো লেবু-জল । এটা শুধু গর্ভবতীর শরীরই ভালো রাখে না, বরং গর্ভের শিশুর অনেক বেশী উপকার করে। লেবুর ভিটামিন ‘সি’ ও পটাশিয়াম শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।
  • যাঁদের হালকা শ্বাসকষ্ট আছে, তাঁরা নিয়ম করে খাবারের আগে এক চামচ লেবুর রস খেতে পারেন। যাঁরা মাইল্ড অ্যাজমায় ভুগছেন, লেবুর রস তাঁদের জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় আপনার দেহের কোষ ও ত্বককে অকাল বার্ধক্যের হাত থেকে রক্ষা করে।
  • এটি ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • লেবুর রস চুলের দারুণ লাইটেনার হিসেবে করে। কোনো কিছু দেয়ার প্রয়োজন নেই। লেবুর রস চুলে দিয়ে নিন। এতে সূর্যের তাপ মাথাকে গরম করতে পারবে না।
  • জেল ম্যানিকিউর নখকে দুর্বল করে দেয়। এতে নখ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। লেবুর রস অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে তাতে নখ ভিজিয়ে রাখুন। এতে ক্ষয়প্রাপ্ত নখ সুন্দর ও সুস্থ হয়ে উঠবে।
  • শীতের শুষ্ক ঠোঁটে যেমন চামড়া ওঠে, আপনার ঠোঁট তেমন হয়ে থাকলে লেবুই ভরসা। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে লেবুর রস ঠোঁটে দিয়ে ঘুমিয়ে যান। এতে আপনার অধর হবে স্ফীত, কোমল ও মসৃণ।
  • চুলে তেল দিতে হয়। কিন্তু শ্যাম্পু করার পরও তাতে তেল চিটচিটে ভাব থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে লেবুর রস বিস্ময়কর কাজ দেয়। লেবুর রসে অ্যাসট্রিনজেন্ট রয়েছে, যা তেলতেলে অংশ শুষে নেয়। চুল হয় ঝরঝরে।
  • শুষ্ক চুলের কন্ডিশনারঃ লেবুর রস, ৩/৪ কাপ অলিভ অয়েল, ১/২ কাপ মধু, দিয়ে একটি প্যাক তৈরী করে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করুন। এটি চুলকে ড্যামেজ ফ্রি করবে।
  • চুল পড়া বন্ধেঃ ৩-৪ টেবিল চামচ নারিকেল তেল নিয়ে তাতে অর্ধেক পরিমাণ লেবুর রস মিক্স করে সপ্তাহে একদিন চুলে লাগান। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল দেখুন।
  • নতুন চুল গজাতেঃ কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এবং আমলকীর রস মিক্স করে প্রতিদিন রাতে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন।
  • খুশকির সমস্যা সমাধানে কাগুজি লেবু ,মেথি বা পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন।
  • লেবুতে ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড রয়েছে। এই রস শুধু ত্বকের তেলতেলে ভাবই দূর করে না, সেই সঙ্গে ত্বককে উজ্জ্বল করে দেয়। তবে এই ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে এসপিএফ ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
  • বয়সের ছাপ পড়ে বলিরেখার মাধ্যমে। তা ছাড়া অনেকের এমনিতেই বলিরেখা পড়তে পারে। লেবুর রস এই বলিরেখা দূর করতে দারুণ কার্যকর। রেখাগুলোতে লেবুর রস দিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন এবং ধুয়ে ফেলুন।
  • মানুষের কনুই এবং হাঁটুর অংশটি খসখসে হয়। এই অংশ দুটিকে মসৃণ এবং সুন্দর করে দেয় লেবুর রস। এক টেবিল চামচ লবণ, সামান্য অলিভ ওয়েল এবং কিছু লেবুর রস মিশিয়ে লাগান। দেখুন জাদুর মতো কাজ করবে।
  • যাদের ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের অভাব রয়েছে তারা কয়েক ফোঁটা ডাবের পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে ঘষুন। দেখবেন, ত্বক সুন্দর কোমল হয়েছে। আবার লেবুর রসে তা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
  • ডিওডরেন্ট ব্যবহার না করলেও চলবে। লেবুর রসে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা বাজে গন্ধ হটিয়ে দেয়। তাই দুর্গন্ধের স্থানে লেবুর রস মেখে নিন। দুর্গন্ধ চলে যাবে।
  • নাকের ওপর বা ত্বকে ব্ল্যাক হেড সৌন্দর্য হানি ঘটায়। লেবুর রস এসব ব্ল্যাক হেডের গোড়া নরম করে তাদের তুলে আনে। লেবুর রসের সঙ্গে আর কিছু মেশানোর প্রয়োজন নেই। বেশ ভালো করে ত্বকে রস দিয়ে ঘষুন।
  • মুখের শ্রী বৃদ্ধি করার জন্য এক টুকরো লেবুর রসের সঙ্গে দুই চামচ দুধ মিশিয়ে তুলার সাহায্যে মুখে প্রলেপ লাগান। ১৫ – ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলু্ন।
  • যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা একটি ছোট তুলার বলে লেবুর রস নিয়ে স্কিন পরিষ্কার করলে ব্রণ কমে যায়। এটি রাতে মুখ ধোয়ার পর ব্রণের দাগে লাগিয়ে রাখলে দাগ তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
  • লেবুর রস রস একটি প্রাকৃতিক অ্যানটিসেপ্টিক, যদি এটি মুখে মাস্ক হিসেবে নেয়া হয় তবে এটি স্কিনের অতিরিক্ত তেল ময়লা দূর করবে এবং ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হতে দূরে রাখবে।
  • অন্যান্য ব্যবহারঃ মাইক্রোওভেন পরিষ্কার করতে লেবুর খোসা ব্যবহার করা হয়।
  • রান্নাঘর, খাবার টেবিল, ষ্টোভ, এর তেলের দাগ পরিষ্কার করতে অর্ধেক পরিমাণ লেবু এবং লবণ নিয়ে তৈলাক্ত স্থানে কিছুক্ষণ ঘষে নিন এরপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
  • চপিং বোর্ড পরিষ্কার করতে লেবু ব্যবহার করতে পারেন।
  • ঘরে যদি চিনি কাঁকুড়ে হয়ে যায় তবে লেবুর খোসা ব্যবহার করে দেখুন।
  • শুনতে আজব লাগলেও মশা তাড়াতে বেশ কার্যকর লেবু। এজন্য লেবুকে দুইভাগ করে কেটে নিয়ে কাটা অংশে লবঙ্গ গেঁথে নিতে হবে। তারপর ঘরের একটি স্থানে রেখে দিন। মশার উপদ্রব থেকে দূরে থাকা যাবে।
  • পিঁপড়া দূর করতে কয়েক টুকরা লেবুর খোসা জানালার কোণে, দরজার কোণে বিশেষ করে যেখান দিয়ে পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকামাকড় আসে সেদিকে রেখে দিন। দেখবেন পিঁপড়া তেমন একটা আসছে না। কারণ পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকামাকড় লেবুর গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না।
  • ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে একটি বা দুটি লেবুর খোসা রেখে দিলে দেখা যায়, ফ্রিজের ভেতরের দুর্গন্ধ দূর হয়ে গেছে।

লেবুর গুনাগুন

লেবুর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া : 

  • যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করে।
  • লেবুর রস বা লেবুতে কারো কারো অ্যালার্জি হয়ে থাকে, তাই আগে থেকে জেনে নিয়ে লেবু চিকিৎসা শুরু করা উচিত৷ তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে৷
  • ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে খাদ্যাভ্যাসে লাগাম টানা হলে কার্বোহাইড্রেট এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণের অভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে লেবু পানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে শরীরে ক্লান্তি ভর করতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবু সেবনে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে পেট ফাঁপাসহ নানান ধরনের সমস্যা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবু ও লেবুর শরবত পানের ফলে পেটে ব্যথা এবং তল পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • লেবুর শরবত বেশি পান করলে শরীর থেকে অনবরত বিষাক্ত পদার্থ বের করতে থাকে। এতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিবার বাথরুমে যেতে হতে পারে যা কিছু ক্ষেত্রে বেশ অস্বস্তিকর।
  • লেবুর শরবত বেশি পান করলে কিছুটা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
  • যে কোনো মানুষের পরিমিত লেবু খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত লেবু স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।