বন্যা উত্তর কৃষি পুনর্বাসন এবং বন্যার ভালোমন্দ দিক

0
1699
বন্যা উত্তর কৃষি পুনর্বাসন এবং বন্যার ভালোমন্দ দিক

সরকার বন্যা উত্তর কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচী ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে। ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ ১৯ হাজার ৩১৫ টাকার সহায়তা দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়। দেশের ৬৪ জেলার ৫ লাখ ৪১ হাজার ২০১ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী এ সহায়তা পাবেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এ সহায়তা দেওয়া হবে। ফসল হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে গম, ভুট্টা, সরিষা, চিনাবাদাম, খেসারি, বিটি বেগুন, গ্রীষ্মকালীন তিল ইত্যাদি। (তথ্য সুত্র দৈনিক প্রথম আলো, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭) সাধারত বাড়তি ফসল হিসাবে বন্যা প্রবণ এলাকায় বোরো রোপন করার আগে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভুট্টা ও সরিষা চাষের প্রবণতা ব্যাপক। চলন বিল এলাকায় বাড়তি ফসল হিসাবে অধুনা রসুন চাষের ব্যাপকতা বেড়ে গেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কৃষি পূনর্বাসন কর্মসূচীর সুবিধা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা পাবেন এটাই প্রত্যাশা।

গত ১১ সেপ্টেম্বর’১৭ তারিখে ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকায় নীলফামারীতে আগাম জাতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু শীর্ষক খবরও আশার সঞ্চার করেছে। নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলারয় অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে আগাম জাতের আমন ধানের চাষ করা হয়, উদ্দেশ্য আগাম জাতের আলু চাষ করা (মুলতঃ গ্রানুলা জাতের আলু) চলতি বছরে অতিবৃষ্টির কারণে এসব উচু জমিতে রোপন করা আমন ধানের ফলনও আশাব্যঞ্জক বলে কৃষকদের ধারনা। এ অঞ্চলে আগাম আলু লাগানোর ৬০/৭০ দিনের মধ্যে আলু তোলার কাজ শুরু হয়। আগাম আলুর দামও পাওয়া যায় আশাব্যঞ্জক। আগাম আলু তোলার পর আবারো এ অঞ্চলের কৃষক একই জমিতে আলুর আবাদ করে থাকে। পরে রোপন করা আলু ফেব্রুয়ারী/মার্চ মাসে উত্তোলনের কাজ শুরু হয় (আমাদের দেশে আলু আবাদের প্রকৃত সময়)। ফেব্রুয়ারী/মার্চ মাসে আলু তোলার আগে অনেক কৃষক মিষ্টি কুমড়ার বীজ বুনে থাকেন অথবা আলু তোলার সাথে সাথে ব্রি-ধান ২৮ জাতের বোরোর চারা রোপন করে থাকেন। এরপর আবারো আগাম জাতের আমন ধানের চারা রোপন করেন এ অঞ্চলের মানুষ। সে হিসাবে অত্র এলাকায় ফসলের নিবিড়তা প্রায় ২০০% বন্যায় ফসল ও প্রানী সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়, গৃহহারা হন লাখো লাখো মানুষ, পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ ও পশুপাখী, ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ধ্বংস হয় হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি হল বন্যার বিধ্বংসী রূপ।

 

বন্যা উত্তর কৃষি পুনর্বাসন এবং বন্যার ভালোমন্দ দিক

প্রায় ১৬ কোটি জনবসতি অধ্যুষিত বাংলাদেশ খাদ্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে ফসলের নিবিড়তা (CROPPING INTENSITY) বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে (২০০-২৫০% পর্যন্ত)। ফলন বাড়াতে গিয়ে নির্বিচারে ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ঔষধ ফলে মাটিতে অম্লতা (ACIDITY) বাড়ার কারনে মাটি হারাচ্ছে তার উর্বরতা (FERTILITY) এবং উৎপাদনশীলতা (PRODUCTIVITY) ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে যেখানে বন্যা একদমই হয় না বা মাঝে মধ্যে সামান্য পরিমানে হয় সেখানে এ আশংকা উদ্বেগজনক। চলতি বৎসরে স্মরণাতীত কালের অস্বাভাবিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ প্রায় সারাদেশে। ফলে ফসলি জমিতে জমেছে পলি, কমেছে মাটির অম্লতা। বৃদ্ধি পেয়েছে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা। আশা করা যায় আগামী ফসল উৎপাদন মৌসুমে বাড়বে উৎপাদন, ভরবে কৃষকের গোলা।ফুটবে কৃষকের মুখে হাসি। বাংলাদেশ হয়ে উঠবে সত্যিকার সোনার বাংলাদেশ। কাজেই বন্যা শুধু ক্ষতিই করে না উপকারও করে।

লেখক  : প্রধান উপদেষ্টা – মোঃ জোনাব আলী

অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (অবসরপ্রাপ্ত)  বিএডিসি ।