কৃষি কাজ ও রাসূল (স.) এর অনুপ্রেরণা

0
5873
কৃষি কাজ ও রাসূল (স.) এর অনুপ্রেরণা

কৃষি কাজে ও রাসূল (স.) এর অনুপ্রেরণা ছিল অসীম। ইসলামে বৃক্ষরোপন তথা কৃষিকাজ কে সবিশেষ সওয়াবের কাজ হিসেবে ‘সাদকায়ে জারিয়া’ বা অবিরত দানরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মানুষ মৃত্যুর পরও সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব অব্যাহতভাবে পেতে থাকবে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, শুধু তিনটি ব্যতীত।

  • যদি সে কোনো সাদকায়ে জারিয়া রেখে যায়,
  •  এমন জ্ঞান রেখে যায়, যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়,
  •  অথবা কোনো সৎ সন্তান রেখে যায়, যে তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করে। এ তিনটি ভালো কাজের ফল সে পেতে থাকে।

সুতরাং, কোনো ব্যক্তি যদি একটি বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যা করেন, তাহলে ওই বৃক্ষ যত দিন বেঁচে থাকবে এবং মানুষ ও জীবজন্তু যত দিন এর ফল বা উপকার ভোগ করতে থাকবে, তত দিন ওই ব্যক্তির আমলনামায় পুণ্যের সওয়াব লেখা হতে থাকবে। এমনকি বৃক্ষরোপনকারী যদি মারা যান, তাহলেও তাঁর আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে, যত দিন বৃক্ষটি বেঁচে থাকবে। কোনো মানুষ যদি ওই বৃক্ষ থেকে কোনো উপকার বা ফল ভোগ নাও করে, তা হলেও সংশ্লিষ্ট বৃক্ষরোপনকারীর আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে। ইসলামে কৃষিকাজের ওপর কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা অনুধাবন করার জন্য নবী করিম (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণীটিই যথেষ্ট। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম গাছ লাগায় বা শস্য বোনে এবং এ থেকে মানুষ, পাখি বা পশু তাদের আহার গ্রহণ করে, তখন তা তার (রোপনকারীর) পক্ষে একটি সাদকা (দান) হিসেবে পরিগণিত হয়।’

(বুখারি ও মুসলিম)

অন্য হাদিসে আছে, ‘গাছ থেকে যা চুরি হয়ে যায়, তা-ও তার পক্ষে একটি সাদকারূপে গণ্য হয়।’ (মুসলিম)

বৃক্ষরোপনের প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ মুহূর্তে তোমাদের কারও হাতে একটি চারা গাছ থাকে, তাহলে তা রোপণ করে যাও।’ (আদাবুল মুফরাদ)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন: “হে আদম সন্তান, তোমাদের সম্পদের মধ্যে তোমরা যা কিছু খেয়েছ বা করেছ, যা কিছু পরিধান করেছ বা ব্যয় করেছ এবং যা কিছু দান করেছ বা নিজের জন্য রেখেছ সেগুলো বাদে তোমাদের আর কী আছে?” (বুখারী)

“রাসুল (সা) খাইবারের লোকজনের সাথে এই মর্মে চুক্তি করেছিলেন যে তারা উৎপাদিত গাছ বা ফল-ফসলের অর্ধেক দিয়ে দিবে(মুসলিম)

জমিকে অলসভাবে ফেলে না রেখে বরং এর ব্যবহারকে নিশ্চিত করে ইসলাম। সমাজতন্ত্রীদের মত জমির মালিকানাকে ইসলাম সমস্যা হিসেবে দেখেনা বরং সামন্তবাদ যার ফলে কৃষিকার ব্যাহত হয় এবং জমির ব্যবহার হয়না বলে ইসলাম একে সমস্যা হিসেবে দেখে। কারণ এর ফলে বিপুল পরিমাণ জমি অলস পড়ে থাকে এবং অর্থনীতিতে কোন অবদান তা রাখতে পারেনা। জমি চাষ সংক্রান্ত অনেকগুলো নিয়ম ইসলাম নির্দেশ করে যার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে:

তিন বছর ধরে যদি কেউ জমিচাষ না করে তাহলে তাদের কাছ থেকে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। এর ভিত্তি হচ্ছে হাদীস বিশষজ্ঞগণ কর্তৃক সংগৃহীত অনেকগুলো বর্ণনা যা উমর (রা) থেকে বর্ণিত এবং যা ইজমা হিসেবে বিবেচিত:

যদি কেউ তিনবছর জমি ফেলে রাখে এবং অন্য কেউ এসে তাতে চাষাবাদ করে তাহলে সে জমির মালিকানা তার”

উমর (রা) বর্ণনা করেন  “তিন বছর পর বেড়া নির্মাণকারীর কোন অধিকার থাকেনা

রাসূল (সা) এর বাণী:

যার জমি আছে সে যেন তাতে রোপন করে অথবা তার ভাইকে দান করে দেয়। যদি সে তা না করে তাহলে তার হাত ধরে ফেল” (বুখারী)

পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষায় ও দূষণমুক্ত সবুজাভ পরিবেশ তৈরিতে বৃক্ষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়; বরং ধর্মীয় কারণেও মানুষকে বৃক্ষরোপন করতে হবে। মানবদরদি রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপন ও তা পরিচর্যার কথা উল্লেখ করে গেছেন।