নেপিয়ার ঘাস চাষ ঘোচাতে পারে বেকারত্ব !!!

0
7337
নেপিয়ার ঘাস চাষ ঘোচাতে পারে বেকারত্ব

নেপিয়ার ঘাস চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গবাদি পশু পালনের জন্য। বিশেষ করে দুগ্ধবতী গাভীর জন্য সবুজ ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। গাভীকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে সবুজ ঘাস দিলে প্রচুর দুধ উৎপন্ন হয়। আগে আমাদের দেশে চারণ ভূমিতে গরুকে খাওয়ানো হত কিন্তু বর্তমানে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চারণ ভূমির পরিমান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কৃষকেরা তাই অল্প জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের ঘাস চাষ হয়। তারমধ্যে নেপিয়ার, পারা, জাম্বু, জার্মান ও পাপচন ঘাস অন্যতম। এসব জাতের মধ্যে বাংলাদেশে নেপিয়ার ঘাস খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নেপিয়ার ঘাস খুব ভালো হয়। কচি অবস্থায় পুষ্টিমান বেশি থাকে। গবাদি প্রাণির জন্য নেপিয়ার অত্যন্ত উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাদ্য। কারণ এ ঘাসটি অল্প সময়েই বৃদ্ধি পায় এবং চার বৎসর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

নেপিয়ার ঘাস চাষ
চিত্র: নেপিয়ার ঘাস চাষ

বর্ষা মৌসুমে দেশের নিন্মভূমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। এসব অঞ্চলের গরু-মহিষের জন্য ঘাসতো দূরের কথা কয়েক মুঠো খড় যোগানোও কঠিন হয়। এসময় কৃষক অভাবের তাড়নায় অনেক গরু-মহিষ কম দামে বিক্রি করে দেন। অনেকের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া খাদ্যাভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। তাই এরকম লক্ষ লক্ষ একর পতিত জমি সারা বছরই খালি পড়ে থাকে। একটু সচেতন হলেই আমরা এই জমি কাজে লাগিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করতে পারি। আসুন জেনে নেই নেপিয়ার ঘাস চাষ সর্ম্পকে।

নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি:

প্রায় সব রকম জমিতেই নেপিয়ার ঘাস হয় তবে উঁচু ও বেলে দোঁআশ মাটি সবচেয়ে ভালো। ডোবা, জলাভূমি, পানি জমে থাকে এরকম স্থানে ভালো হয় না। জমিতে ৪/৫টি চাষ দিয়ে আগাছা বেছে নিয়ে ঘাসের কান্ড অথবা শিকড়সহ মূল মাটিতে পুঁততে হয়।

রোপণ প্রণালী ও সময়:

সারা বর্ষা মৌসুমেই রোপণ করা যায়। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে প্রথম বৃষ্টির পর জমিতে রোপন করা হলে প্রথম বছরেই ৩-৪ বার ঘাস কাটা যেতে পারে। কান্ড লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন রোপণকৃত কান্ডে ২টি গিড়া থাকে। এ ঘাস সারিবদ্ধভাবে লাগাতে হয়, এক সারি থেকে অন্য সারির দুরত্ব ২-৩ ফুট এবং এক চারা থেকে অন্য চারার দুরত্ব ১-১.৫ ফুট হবে। আগাছামুক্ত করার পর নেপিয়ার ঘাসের কাটিং লাগানোই ভালো। তাতে ফলন ভালো হয়। চারার গোড়া মাটি দিয়ে শক্ত করে চাপা দিতে হবে। পানিতে রস না থাকলে চারা লাগানোর পর পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

সার প্রয়োগ এবং পানি সেচ:

বর্ষা মৌসুমে সেচের প্রয়োজন নেই। চারা লাগানোর আগে জমি তৈরির একরে ২০০০-২৫০০ কেজি গোবর সার ছিটিয়ে ভালো করে মাটিতে মিশিয়ে দিলো ফলন ভালো হয়। এছাড়া একর প্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া, ২৬ কেজি টিএসপি ও ২০ কেজি এমপি সার মই দিয়ে মাটির সংঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। সারা বর্ষা মৌসুমে এই ঘাস নাগানো যায়। প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ২৬ কেজি ইউরিয়া দিলো ফলন ভালো পাওয়া যায়। সার ছিটানোর পূর্বে দুই সারির মাঝখানে লাঙ্গল বা কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে।

নেপিয়ার ঘাস

ফসল কাটা ও ফলন:

প্রথম লাগানোর ৪০-৫০ দিন পরেই ঘাস কেটে খাওয়ানো যেতে পারে। গোড়ায় ২-৩ ইঞ্চি রেখে ঘাস কাটতে হবে। বছর ৮-১০ বার কাটা যায়। একর প্রতি ৬০,০০০-৬৫,০০০ কেজি কাঁচা ঘাস হতে পারে।  ১ বিঘা জমিতে প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকার ঘাস বিক্রি করা যায়। পৌষ-ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শীতের সময় শুষ্ক আবহাওয়ার দরুন ঘাসের ফলন কমে যায়। তবে সেচের ব্যবস্থা থাকলে ফলন ভালো পাওয়া যেতে পারে।

খাওয়ানোর নিয়ম এবং সংরক্ষণ:

জমি থেকে কেটে এনে টুকরো করে খাওয়ানোটাই উত্তম। তাছাড়া খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যায়। শুকিয়ে রাখা সুবিধাজনক নয় তবে সাইলেজ করে সংরক্ষণ করা যায়।

বীজ বা কাটিং কোথায় পাওয়া যাবে:

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, নিকটস্থ বীজ বিক্রয়ের বড় দোকান, সরকারী ডেইরি ফার্ম, অথবা বাংলাদেশে লাইভস্টক রিসার্চ ইন্সটিটিউট (BLRI) সাভার ফোন# ০২-৭৭৯১৬৮৩.

তাই আসুন আমাদের বাড়ির আশে পাশের পতিত জমি ফেলে না রেখে নেপিয়ার ঘাস চাষ করি এবং বেকারত্ব দূর করি।