ভিটামিন “এ” ঘাটতি পূরণে চাষ করুণ গিমা কলমী

0
3180
ভিটামিন “এ” ঘাটতি পূরণে চাষ করুণ গিমা কলমী
চিত্র : কলমী শাক

গিমা কলমী নতুন জাতের একটি স্থল কলমীর জাত। ফসলটি বর্ষজীবী বলে সারা বছরই এ সবজি পাওয়া যায়। এটি একটি ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ গ্রীষ্মকালীন শাক। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে যখন দেশে সবজির খুব অভাব দেখা দেয় তখন গিমা কলমী শাক কিছুটা হলেও সে অভাব দূর করতে সাহায্য করে। অন্যান্য পাতা জাতীয় সবজি যেমন পালং, ডাঁটাশাক, পাটশাক যেভাবে খাওয়া যায় গিমা কলমীও তেমনি ভাবে খাওয়া যায়। মাছের সাথেও খুব উপাদেয় হয়।

পূর্ব, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে কলমি শাকের চাষ করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে পানিতে বা পানির ধারের ভেজা মাটিতে এই গাছ জন্মায়, আর বেশি যত্নেরও দরকার হয় না। মালয়ী ও চীনা খাবারে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশে এটি শাক হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। কলমি শাক সাধারণত ভাজি হিসাবে রান্না করা হয়। এছাড়া ঝোলসহ মাছ দিয়েও রান্না করে খাওয়ার চল রয়েছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই শাকটির বিস্তার ঘটানো হয়েছে, তবে উচ্চ বর্ধনশীল হওয়ার কারণে সেদেশে এটি ‘বিরক্তিকর আগাছা’ রূপে গণ্য।

মাটি
সব ধরনের মাটিতেই এর চাষ করা যায়। দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ যার নীচে এঁটেল মাটির স্তর রয়েছে এমন মাটি এর চাষের জন্য ভাল।

জাত
বারি গিমাকলমী-১, বেম্বু লিফ, এলপি ১, ক্যাং কং ইত্যাদি। বারি গিমাকলমী ১ চৈত্র থেকে শ্রাবণ মাসে চাষ করা হয়। বীজ বোনার ৩০ দিন পর থেকেই শাক তুলে খাওয়া যায়। এ জাতের হেক্টর প্রতি ফলন ৩৫-৪০ টন।

বীজ বোনার সময়:  চৈত্র থেকে শ্রাবণ মাস।

বীজের পরিমাণ
এক শতকে ৪০-৫০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি ১০-১২ কেজি।

বীজ বপনের পদ্ধতি
বীজ ৩০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে ১ সেন্টিমিটার গভীর করে বুনতে হয়(বীজ বপনের পূর্বে ২৪ ঘন্টা বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়)। বীজ বোনার ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে এর চারা গজায়।

জমি তৈরী
৫-৬ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ঝুরঝুরা করে তৈরি করতে হবে। ১ মিটার চওড়া ও ৩ মিটার লম্বা করে ভিটি তৈরি করতে হবে এবং উভয় পাশে নালা রাখতে হবে। প্রায় ৩০ সেন্টি মিটার দূরে দূরে ৩টি সারিতে বীজ বপন করতে হবে।

সারের পরিমাণ

ভালো ফলনের জন্য প্রতি শতকে গোবর সার ৪০ কেজি, ইউরিয়া সার ৬০০ গ্রাম, টিএসপি সার ২০০ গ্রাম ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। অর্ধেক ইউরিয়া বাদে সব সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হয়। সেই অর্ধেক ইউরিয়া ১ম, ২য় ও ৩য় বার ফসল তোলার পর পরই সমান ৩ ভাগ করে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। অল্প জায়গায় চাষ করলে শুধুমাত্র গোবর সার দিলেই চলে।

চারা রোপণ
গাছের কান্ড কেটে ও রোপণ করা যায়। শীতকালে বীজ উৎপন্ন হয়। বীজতলায় চারা উৎপন্ন করে লাগাতে হলে ১৫-২০ দিনের চারা রোপণ করতে হয়।

পরিচর্যা
চারা গজানোর পর প্রতি ১৫ সেন্টিমিটার  দূরে দূরে একটি করে চারা রেখে বাকি চারা উঠিয়ে ফেলতে হবে। গিমা কলমির চারা অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু তাই বাছাই করা চারা পুনরায় লাগানো যেতে পারে। বৃষ্টির অভাবে সেচ দিতে হয়। আগাছা দেখা দিলে তা পরিস্কার করতে হবে। জমির উপরিভাগের মাটিতে চটা লেগে গেলে নিড়ানীর সাহায্যে সাথে সাথে চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। পানি যাতে জমে না থাকে সেজন্য পানি নিষ্কাশন নালা তৈরি করে রাখতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগ
পাতার বিটল, কচ্ছপ পোকা , ঘোড়া পোকা, বিছা পোকা গিমা কলমীর পাতা খেয়ে নষ্ট করে। জমি বেশি ভেজা বা স্যাঁতসেতে থাকলে তরুণ গাছের গোড়া পচে নষ্ট হয়। ড্যাম্পিং অফ রোগের কারণে এরূপ হয়। পোকা ও রোগের আক্রমণ হলে কৃষিকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ
বীজ বপনের ৩-৪ দিনের মধ্যেই গাছ মাটির উপরে গজিয়ে ওঠে। ভাল আবহাওয়ায় উপযুক্ত পরিচর্যায় বপনের দিন থেকে মাত্র ৩০ দিনেই গিমা কলমি সবজি হিসেবে সংগ্রহ করা যেতে পারে।

শাকের ফলন
প্রতি শতকে ১৪০-১৬০ কেজি, হেক্টর প্রতি ১৫-২০ টন।