কাঁকড়া চাষ করে হতে পারেন লাখপতি !!

0
2140
কাঁকড়া চাষ করে হতে পারেন লাখপতি !!

কাঁকড়ার চাহিদা বিশ্বজুড়ে। দেশেও বাড়ছে কদর। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী উপাদানগুলোর মধ্যে কাঁকড়ার অবদান ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ দেশের রপ্তানিকৃত মৎস্য সম্পদের মধ্যে চিংড়ির পরেই কাঁকড়ার স্থান। সুষ্ঠ পরিকল্পনা সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আজ দেশের প্রায় অনেকেই সম্ভাবনার এই কাঁকড়া চাষ করে লাক্ষপতি থেকে কোটিপতি হয়েছেন।

সম্ভাবনার কাঁকড়া চাষ:

দেশে দুই ধরনের কাঁকড়া পাওয়া যায়। একটি লোনাপানির, অন্যটি মিঠাপানির। মিঠাপানির কাঁকড়া তুলনামূলক কম। লোনাপানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ যত বেশি থাকবে, কাঁকড়ার উৎপাদনও তত বেশি হবে। সামুদ্রিক প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঁকড়া হলো ম্যাডক্র্যাব। এ কাঁকড়াটি অন্যান্য প্রজাতির কাঁকড়ার তুলনায় আকারে সবচেয়ে বড় হয়ে থাকে।

প্রাপ্তি স্থান:

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল, বিস্তৃত চিংড়িঘের ও সুন্দরবনের গোটা বনাঞ্চলে লোনাপানির কাঁকড়া দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ সেন্টমার্টিন ব্যতীত কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও খুলনার উপকূলীয় নদীগুলো এবং মহেষখালী, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, দুবলারচর এলাকা, উপকূলীয় চিংড়ির খামার, সমুদ্রের মোহনা, নদী এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল (সুন্দরবন) অঞ্চলে কাঁকড়ার বিস্তৃতি দেখা যায়।

কাঁকড়া চাষ

কাঁকড়া চাষের উপযুক্ত পরিবেশ:

বাংলাদেশের আবহাওয়া কাঁকড়া চাষের জন্য অত্যান্ত সংবেদনশীল। তাই বাগদা চিংড়ির মতো কাঁকড়া উপকূলীয় লবণাক্ত পানিতে চাষ করা যায়। সম্ভাবনার এ কাঁকড়া চাষের মাটি ও পানির গুণাবলি নিম্নরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয়।

মাটির বৈশিষ্ঠ্য:

১. কাঁকড়া চাষের মাটি নরম দো-আঁশ বা এঁটেল মাটি উপযোগী;

২. মাটিতে অবস্থিত জৈব পদার্থ ৭% থেকে ১২%;

৩. হাইড্রাজেন সালফাইড ও এমোনিয়া গ্যাস যুক্ত মাটি;

৪. এসিড সালফেট মুক্ত মাটি;

৫. চাষকৃত পুকুর বা জলাশয় অবশ্যই হালকা শ্যাওলা ও জলজ আগাছা মুক্ত পরিবেশ হতে হবে।

পানির গুণাবলি:

কাঁকড়া চাষে পানির গুনাবলী নিম্নে দেওয়া হল:-

লবণাক্ততা

১০-২৫ পিপিটি

 

পিএইচ

৭.৫-৮.৫

 

হার্ডনেস

৪০-১০০ পিপিএম

তাপমাত্রা

২৫-৩২ সে.

অ্যালকালিনিটি

৮০ মিগ্রা/লি.

দ্রবীভূত অক্সিজেন

৪ পিপিএমের ঊর্ধ্বে

 

কেন কাঁকড়া চাষ করব:

১. আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা থাকায় এর উৎপাদন অধিক লাভজনক;

২. বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ কাঁকড়া চাষের জন্য উপযোগী;

৩. বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক পোনা (কিশোর কাঁকড়া) পাওয়া যায়;

৪. কাঁকড়া রপ্তানির মাধ্যমে দেশ প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে ফলে দেশের জাতীয় উন্নয়ন তরান্বিত            হয়;

৫. কাঁকড়ার খাবার স্বল্পমূল্যে সংগ্রহ করা যায়;

৬. কাঁকড়া পানি ব্যতীত অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে এবং প্রতিকূল পরিবেশ সহ্য করতে পারে;

৭. কাঁকড়ার ওপচাজনের বাড় বাড়তির হার বেশি;

৮. কাঁকড়া পচা আর্বজনা খেয়ে পরিবেশ বিশুদ্ধ করে।

সম্ভাবনার চাষ:

দৃষ্টান্ত স্বরুপ দেখা যায় যে, মহেশখালীর ধলঘাটার সিরাজ উল্লাহ একজন কাঁকড়া চাষি তিনি বলেন,

প্রাথমিক অবস্হায় কাঁকড়া চাষের জন্য প্রথমে ‘উপকূল থেকে ৪০ থেকে ১৫০ গ্রাম ওজনের ছোট কাঁকড়া সংগ্রহ করে দেড় একরের ঘেরে লালন পালন শুরু করেন। তারপর ২০ থেকে ২৫ দিন পর

সেই কাঁকড়া রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম পাঠান। এতে তার সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বছর এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়। কিন্তু তিনি উপলব্ধি করেন যে, পোনা পেলে কাঁকড়া চাষ করলে তার উৎপাদন কমপক্ষে ১০ গুণ বেড়ে যেত।’

উল্লেখ্য যে, মহেশখালীর ধলঘাটা, গোরকঘাটা, কুতুবজোম,মাতারবাড়ী, লম্বাবিল,কাঞ্জর পাড়া, টেকনাফের হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, রহমতের বিল,আঞ্জুমানপাড়া, ঘুমধুম; উখিয়ার বালুখালী, পেকুয়ার মগনামা, কড়য়ারদিয়া; উজারটিয়া, চকরিয়ার বদরখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় আট হাজার মানুষ কাঁকড়া চাষের সঙ্গে জড়িত।

মহেশখালীর কালারমারছড়ার সফল কাঁকড়া ব্যবসায়ী সনজিত দাশ বলেন যে, উপকূলে এখন রপ্তানিযোগ্য বিভিন্ন গ্রেডে কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে যেমন:-

‘এ’ গ্রেড কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা

‘বি’ গ্রেড কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং

‘সি’ গ্রেড কাঁকড়া স্থানীয় বাজারে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কিভাবে কাকড়া চাষ করবেন

সুষ্ঠপরিকল্পনার অভাবে নির্বিচারে কাঁকড়া আহরণের ফলে এখন ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেড কাঁকড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম জানান,বাংলাদেশে প্রায় ২০ প্রজাতির কাঁকড়া দেখা যায় এবং এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে শিলা কাঁকড়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তিনি আর ও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিতে এই কাঁকড়ার উৎপাদন করা গেলে রপ্তানির বিপরীতে বছরে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এতে করে যেমন দেশের বেকার যুবকের কর্মসংস্হানের সুযোগ সৃষ্টি হবে ঠিক তেমনিভাবে কাঁকড়া রপ্তানির করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের জাতীয় আয় তরান্বিত হবে।